সমস্যাঃ ধরুন, আপনি কোন এক ব্যক্তির কাছে ০২ (দুই) লাখ টাকা পান। ঐ ব্যক্তি আপনার পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য আপনাকে একটি চেক দিলেন। আপনি চেকটি নগদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিলেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাকে জানালেন যে উক্ত অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নাই। উক্ত বিষয়টি চেকদাতাকে অবহিত করে আপনার পাওনা টাকা চাইলে চেকদাতা আপনাকে পাওনা টাকা দিতে অস্বীকার করেন কিংবা দেই-দিচ্ছি বলে তালবাহানা করতে থাকেন। – এক্ষেত্রে আপনার কি করণীয়?
সমাধানঃ কখনো কারো নিকট থেকে এরূপ কোন প্রতারণার শিকার হয়ে থাকলে বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন (The Negotiable Instrument Act, 1881) এর বিধান অনুযায়ী আপনি প্রতিকার পাবেন। তবে এক্ষেত্রে আইনগত প্রতিকার পেতে রয়েছে নির্ধারিত কিছু সময়সীমা। সঠিক আইনগত প্রতিকার পেতে আপনাকে অবশ্যই নিচের ০৩ (তিন) টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-
- চেকে প্রদত্ত তারিখ থেকে অবশ্যই ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে ব্যাংকে চেকটি নগদায়নের জন্য উপস্থাপন করতে হবে।
- চেকটি ডিসঅনার হলে ব্যাংক থেকে ডিসঅনরা স্লিপটি সংগ্রহ করতে হবে এবং ডিসঅনারের তারিখ থেকে অবশ্যই ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে, চেকদাতাকে পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিন সময় দিয়ে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে A/D সহকারে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করতে হবে।
- লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করার তারিখ থেকে অবশ্যই ৩০ (ত্রিশ) দিন অতিক্রম করার পরবর্তী ০১ (এক) মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে মামলা দায়ের করতে হবে।
আবারো বলছি, চেক সংক্রান্ত প্রতারণার সঠিক আইনগত প্রতিকার পেতে অবশ্যই উল্লেখিত ০৩ (তিন) টি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যে কোন একটি ব্যর্থ হলে The Negotiable Instrument Act, 1881 -এর প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়।
[উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝতে অসুবিধা হলে কিংবা বুঝতে না চাইলে সহজ সমাধান হলো চেকে প্রদত্ত তারিখ থেকে ০৬ (ছয়) মাসের মধ্যে কোন বিজ্ঞ আইনজীবীর শরণাপন্ন হওয়া।]
মামলা করতে যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়-
- চেক ডিসঅনার হওয়ার সময় অবশ্যই ব্যাংক থেকে মূল চেকটি ফেরত নিতে হবে এবং ডিসঅনার স্লিপ সংগ্রহ করে নিজ হেফাজতে রাখতে হবে।
- লিগ্যাল নোটিশ প্রদানের সময় নোটিশের একটি কপি নিজ হেফাজতে রাখতে হবে।
- লিগ্যাল নোটিশ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রদান করলে ডাক রশিদ সংগ্রহ করে কিংবা দৈনিক বাংলা জাতীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করলে উক্ত পত্রিকার কপি সংগ্রহ করে নিজ হেফাজতে রাখতে হবে।
- A/D ফেরত আসলে উক্ত A/D এর মূল কপি নিজ হেফাজতে রাখতে হবে।
মামলা কোথায় করতে হয়-
এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে Cause of Action (মামলা দায়েরের কারণ) মহানগর এলাকার মধ্যে উদ্ভব হলে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এবং মহানগর এলাকার বাইরে উদ্ভব হলে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করতে হয় এবং এ মামলার বিচার হয় দায়রা জজ আদালতে। Cause of Action (মামলা দায়েরের কারণ) উদ্ভবের এলাকা বলতে সাধারণত বুঝায় চেকটি যে ব্যাংকে ডিসঅনার হয়েছে সেই ব্যাংকের এলাকাকে।
[ক্ষেত্র বিশেষ লিগ্যাল নোটিশ প্রদানের মাধ্যমেও নতুন Cause of Action (মামলা দায়েরের কারণ) উদ্ভবের এলাকা সৃষ্টি করা যায়। এরূপ প্রয়োজন হলে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হবে।]
মামলা দায়েরের সময় যা যা প্রদর্শন এবং দাখিল করতে হয়-
- মূল চেক;
- মূল ডিসঅনার স্লিপ;
- লিগ্যাল নোটিশ কিংবা পত্রিকা বিজ্ঞপ্তির কপি;
- মূল ডাক রশিদ;
- মূল A/D.
উল্লেখিত কাগজপত্র বিজ্ঞ আদালতে প্রদর্শন করতে হবে এবং সবগুলোর এক সেট ফটোকপি ফিরিস্তিযোগে মামলার নালিশী দরখাস্তের সাথে দাখিল করতে হবে।
এই অপরাধের শাস্তি-
শাস্তি হলো- সর্বোচ্চ ০১ (এক) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা চেকে বর্ণিত টাকার সর্বোচ্চ তিন গুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ড।
চেকের মামলার ক্ষেত্রে আপিলের বিধান-
এই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে আপিল দায়ের করা যায় তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চেকে উল্লেখিত টাকার ৫০% টাকা দণ্ড প্রদানকৃত আদালতে জমা দিতে হবে।
আলোচকঃ[মনে রাখবেন বিজ্ঞ আদালত দুই গুণ বা তিন গুণ অর্থদণ্ড প্রদান করলেও আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে চেকে উল্লেখিত টাকার ৫০% টাকা জমা দিতে হয়।]
মো. এস এইচ সোহাগ,
আইনজীবী, জজ কোর্ট, ঢাকা।