পুনরায় বিয়ের

স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও পুনরায় বিয়ের আইনগত প্রতিকার

আইনগত অধিকার
বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

সমস্যাঃ স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও পুনরায় বিয়ের আইনগত প্রতিকার কি কিংবা আপনার সাথে এরূপ ঘটনা ঘটলে আপনার করণীয় কি?

সমাধানঃ  বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪৯৪/৪৯৫ ধারার বিধানমতে স্বামী বা স্ত্রীর জীবদ্দশায় পুনরায় বিবাহ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রে প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রী ৪৯৪ ধারায় মামলা দায়ের করতে পারেন এবং যে ব্যক্তির সাথে পরবর্তীতে বিয়ে হয় তার নিকট পূর্ববর্তী বিয়ের তথ্য গোপণ করলে তিনি ৪৯৫ ধারায় মামলা দায়ের করতে পারেন।

৪৯৪ ধারার বিধানমতে যদি কোনো ব্যক্তি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও পুনরায় বিয়ে করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ ০৭ (সাত) বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। [উল্লেখ্যঃ বিয়ের সময় পর্যন্ত প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রী যদি ক্রমাগত ০৭ (সাত) বছর পরবর্তী বিবাহ অনুষ্ঠানকারীর নিকট থেকে অনুপস্থিত থেকে থাকে এবং সেই ব্যক্তি জীবিত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোনো সংবাদ না পান, তাহলে এ ধারার আওতায় তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধী বলে গণ্য হবেন না।]

৪৯৫ ধারার বিধানমতে যদি কোনো ব্যক্তি পূর্ববর্তী বিয়ের তথ্য গোপণ করে পুনরায় বিয়ে করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ (দশ) বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

উল্লেখিত দুটি ধারার অপরাধই জামিনযোগ্য অপরাধ।

আইন সংক্রান্ত কোন বিষয় জানতে চাইলে আপনার প্রশ্নটি আমাদেরকে জানান; প্রশ্ন জানাতে এখানে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪৯৪ ধারার অপরাধ প্রমাণ করা এবং অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার জন্য ন্যূনতম ০২ (দুই) টি দালিলিক প্রমাণ প্রয়োজন-

  1. প্রথম বিবাহের কাবিননামা; এবং
  2. দ্বিতীয় বিবাহের কাবিননামা।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪৯৫ ধারার অপরাধ প্রমাণ করা এবং অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার জন্যও ন্যূনতম ০২ (দুই) টি দালিলিক প্রমাণ প্রয়োজন-

  1. প্রথম বিবাহের কাবিননামা; এবং
  2. দ্বিতীয় বিবাহের কাবিননামা কিংবা ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর প্রথম স্বামী/স্ত্রী কর্তৃক তালাকের নোটিস।

এরূপ একটি অপরাধের মামলায় মহামান্য উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে, আমেনা খাতুন গং বনাম মুনসী মিয়া মামলা যা ১২ ডিএলআর ৩০৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে। সিদ্ধান্তটি এমন যে, স্ত্রী দ্বিতীয়বার বিবাহ করায় তাকে সাজা দিতে হলে অভিযোগকারীর সঙ্গে প্রথম বিবাহটি বৈধভাবে হয়েছিল এরূপ প্রমাণ থাকা দরকার।

এই ব্লগে আপনার নিজের লেখা আর্টিকেল প্রকাশ করতে আমাদেরকে পাঠান; আর্টিকেল পাঠাতে এখানে ক্লিক করুন

 

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কেবলমাত্র স্ত্রী পুনরায় বিবাহ করলে এই ধারাদ্বয়ে অপরাধ হবে। কারণ আমাদের দেশে স্বামী তার জীবদ্দশায় অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে। তাতে অপরাধ হয় না। তবে মুসলিম পারিবারিক অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১-এর ৬(৫) ধারা মতে স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত বিবাহ করলে অপরাধ হবে। মুসলিম শরিয়ত অনুসারে একসঙ্গে চারজন স্ত্রী রাখার বিধান বহাল আছে। পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখতে পারে। আবার হিন্দুদের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী একাধিক বিবাহ করার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। সুতরাং হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মেই বহুবিবাহের অনুমতি রয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু নারীদের ক্ষেত্রে। ফলে দণ্ডবিধির ৪৯৪/৪৯৫ ধারাটি মুসলমান ও হিন্দু পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

বিঃদ্রঃ প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর দ্বিতীয় বিবাহ করলে কোনো অপরাধ হবে না।

আলোচকঃ
মাফতিজা নূর লুচী,
আইনজীবী, জজ কোর্ট, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *